তদন্তেও কাজ হয়নি
১৭ জুলাই ২০১৮ মঙ্গলবার, ১০:২৬ এএম
বছর শেষে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হতে পারে ৪ টাকা। অথচ এ শেয়ার বাজারে কেনাবেচা হচ্ছে ৪ হাজার টাকার উপরে। যা অভিহিত মূল্যের চারশ গুন বেশি। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি মুন্নু জুট স্টাফলার্সের ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার দর গতকাল ৪ হাজার টাকা অতিক্রম করেছে। এর মাধ্যমে বর্তমানে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে সবচেয়ে দামি শেয়ারের তকমা পেয়েছে কোম্পানিটি।
অভিহিত মূল্যের ১০ গুনের বেশি আয়ের কারণে এতোদিন বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে সবচেয়ে দামি শেয়ারের অধিকারী ছিল ব্রিটিশ অ্যামেরিকান কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (বিএটিবিসি)। বর্তমানে এ কোম্পানির ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার ৩ হাজার ২৯৯ টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে। সর্বশেষ হিসাব বছরে বিএটিবিসি প্রতি শেয়ারে আয় করে ১৩০ টাকা ৫০ পয়সা। আর চলতি প্রথম প্রান্তিকে এ কোম্পানির ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৪৫ টাকা ৮২ পয়সায়, যা হিসাব বছর শেষে ১৮৩ টাকায় উন্নীত হতে পারে। তবে শেয়ার দর বিবেচনায় বিপুল আয়ের এ কোম্পানিকেও ছাড়িয়ে গেছে মুন্নু জুট স্টাফলার্স।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে বিএটিবিসি শেয়ারহোল্ডারদের ৫৫০ থেকে ৬২০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। আর মুন্নু জুট স্টাফলার্স তার শেয়ারহোল্ডারদের সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ দেয়। মুন্নু জুট স্টাফলার্সের শেয়ার দর অস্বাভাবিক বেড়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদন্তের সময়ই।
চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি মুন্নু জুট স্টাফলার্সের প্রতিটি শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে ৬৪৯ টাকায়, যা ১ এপ্রিল ৮৪৬ টাকায় উন্নীত হয়। যৌক্তিক কারণ ছাড়া অস্বাভাবিক হারে এ কোম্পানির শেয়ার দর বাড়তে থাকায় গত ৪ এপ্রিল ডিএসইর কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবে কোম্পানিটি জানায় যে, দরবৃদ্ধির নেপথ্যে মূল্য সংবেদনশীল কোনো তথ্য নেই। এরপর প্রায় প্রতি কার্যদিবসে সর্বোচ্চ দরে কেনাবেচা হতে থাকে এ কোম্পানির শেয়ার। অধিকাংশ সময়ই বিক্রেতা পাওয়া যায়নি। গত ২৩ এপ্রিল শেয়ারটির দর ১ হাজার ৬৫৮ টাকায় উন্নীত হয়।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গুজবের উপর ভিত্তি করে স্বল্প মূলধনী এ কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। বাজারে গুজব রয়েছে, কোম্পানিটি একিটি বিদ্যমান শেয়ারের বিপরীতে পাঁচটি রাইট শেয়ার ইস্যু করবে। আবার এ হিসাব বছর শেষে ৪০০ শতাংশ বোনাস ইস্যুর গুজবও রয়েছে। সম্প্রতি কোম্পানিটি অনুমোদিত মূলধন বাড়ানোয় গুজব আরো জোরালো হয়েছে। এ কারণেই অধিকাংশ লেনদেন দিবসে মুন্নু জুট স্টাফলার্সের শেয়ারে বিক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না।
মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই মুন্নু জুট স্টাফলার্সের শেয়ার দর অস্বাভাবিক হারে বাড়ায় গত ২৪ এপ্রিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। বিএসইসির তদন্ত কমিটি গঠনের পর শেয়ারটির দর আরো বাড়তে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে গত মে ও জুন মাসে শেয়ার দর অস্বাভাবিক হারে বাড়ার নেপথ্যে কোন মূল্য সংবেদনশীল তথ্য রয়েছে কিনা, তা জানতে চেয়ে দুইবার নোটিস পাঠায় ডিএসই। জবাবে কোম্পানিটি জানায়, দরবৃদ্ধিতে কোন মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। এরপর আবারো শেয়ার দর বাড়তে থাকে।
ডিএসইর অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে নোটিশ ও বিএসইসির তদন্তের মধ্যেই গত ২১ জুন মুন্নু জুট স্টাফলার্সের শেয়ার দর ৩ হাজার ৪৫২ টাকায় উন্নীত হয়। সেদিনই এ কোম্পানি শেয়ারের অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির নেপথ্যে কর্মার্স ব্যাংক সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখতে আরো একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি। তদন্ত কমিটির কার্যক্রম চলার মধ্যেই শেয়ারটির লেনদেনে অধিকাংশ সময়ই বিক্রেতা অভাব দেখা যায়। ফলশ্রুতিতে আবারো দাম বাড়তে থাকে। আর গতকাল তা ৪ হাজার ১৭ টাকায় উন্নীত হয়। ২০১০ সালে অভিহিত মূল্য পরিবর্তনের পর কোন কোম্পানির শেয়ার দর এটিই সর্বোচ্চ।
এ বিষয়ে বিএসইসির মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বলেন, মুন্নু জুট স্টাফলার্সের শেয়ার লেনদেনে অস্বাভাবিকতা সন্দেহে বিএসইসি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে কারসাজির প্রমান পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ২০ জুন মুন্নু জুট স্টাফলার্সের অনুমোদিত মূলধন এক কোটি থেকে বাড়িয়ে ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। বর্তমানে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৪৬ লাখ টাকা। চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে এ কোম্পানির ইপিএস দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ৯৫ পয়সায়। ২০১৭ সালের জুন মাস শেষে এ কোম্পানির শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৫২ টাকা ২৫ পয়সা।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।