facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪

Walton

আলহাজ টেক্সটাইলের বিক্রিতে ধস


২৫ জুন ২০১৯ মঙ্গলবার, ০২:১৩  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


আলহাজ টেক্সটাইলের বিক্রিতে ধস

চলতি মূলধনের তীব্র ঘাটতির পাশাপাশি গুদামে মজুদ পণ্য রাখার জায়গা না থাকা এবং বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে বিক্রিতে ধস নেমেছে আলহাজ টেক্সটাইল লিমিটেডের। এ কারণে আজ থেকে এক মাসের জন্য কারখানা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানিটির পর্ষদ। গতকাল বেলা সাড়ে ৩টায় অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

আলহাজ টেক্সটাইলের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মো. শওকত আলী বলেন, বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে বিক্রি কমে গেছে। পাশাপাশি গুদামে মজুদ করা পণ্য রাখার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই। তার ওপর যোগ হয়েছে চলতি মূলধন সংকট। সব মিলিয়েই কোম্পানির পর্ষদ এক মাসের জন্য কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে যদি চলতি মূলধন সংকট কেটে যায়, তাহলে কারখানা চালু করা সম্ভব হবে।

অগ্রণী ব্যাংকের কাছ থেকে পাওয়া ৩৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা কী কাজে লাগানো হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ টাকা আমরা ব্যাংকে এফডিআর হিসেবে রেখে দিয়েছি। আপাতত তা অন্য কাজে ব্যয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া অগ্রণী ব্যাংকের সঙ্গে অর্থঋণ আদালতে বিএমআই প্রকল্পে অর্থায়ন-সংক্রান্ত একটি মামলা চলছে। ব্যাংকের দাবি অনুসারে তারা বিএমআরই প্রকল্পে অর্থায়ন বাবদ ৩৬ কোটি টাকা পাবে। অন্যদিকে আমাদের হিসাব অনুসারে এটি ১৩ কোটি টাকার বেশি হবে না।

উল্লেখ্য, এ বছরের ১৪ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি আশিষ রঞ্জন দাসের দ্বৈত বেঞ্চ আলহাজ টেক্সটাইল লিমিটেডকে ৫৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা পরিশোধের জন্য অগ্রণী ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছিলেন। হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে অগ্রণী ব্যাংক সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছিল। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ৪ এপ্রিলের মধ্যে আলহাজ টেক্সটাইলকে ২৫ কোটি টাকা পরিশোধের জন্য অগ্রণী ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আদালতের নির্দেশ অনুসারে ব্যাংক কোম্পানিটিকে এ অর্থ পরিশোধ করেছে। সর্বশেষ গত ৭ মে দুই সপ্তাহের মধ্যে অগ্রণী ব্যাংককে আলহাজ টেক্সটাইলকে আরো ১০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা দেয়ার নির্দেশ দেন আদালত। সে নির্দেশনা অনুসারে ব্যাংক তা কোম্পানিটিকে পরিশোধ করে দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, আলহাজ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড ও অগ্রণী ব্যাংকের মধ্যে বিবাদ বেশ পুরনো। আলহাজ টেক্সটাইল ১৯৬১ সালে প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ১৯৭২ সালে সরকার কোম্পানিটিকে জাতীয়করণ করে এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) কাছে ন্যস্ত করে। পরবর্তী সময়ে ১৯৮২ সালে আলহাজ টেক্সটাইলকে বেসরকারীকরণ করে এর দায়িত্ব আগের মালিকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ব্যবস্থাপনা হস্তান্তরের সময় ২ কোটি ২৯ লাখ ২০ হাজার ৮০৫ টাকার দায় থেকে যায়। কিন্তু এ দায় উদ্ভূত হয়েছিল বিটিএসসির কাছে কোম্পানিটির দায়িত্ব থাকাকালীন। তাই এ অর্থ পরিশোধের জন্য সরকার, বিটিএমসি, বিটিএমএ ও ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে কোম্পানি, বিটিএমসি ও ব্যাংকের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুসারে ঋণ পরিশোধের জন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়। এ তহবিলের ক্যাশ ক্রেডিট কোম্পানির পক্ষ থেকে এবং সুদ ব্যাংকের পক্ষ থেকে পরিশোধ করার কথা ছিল। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত এ তহবিলে ২ কোটি ৯ লাখ টাকা জমা হয়। পরবর্তী সময়ে চুক্তি অনুসারে বিশেষ তহবিলটিকে স্থায়ী আমানতে (এফডিআর) রূপান্তর করা হয় এবং লিয়েন মার্ক করে অগ্রণী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে রাখা হয়। ২০০৮ সালে ঋণ পরিশোধের পর অ্যাকাউন্টে ২৪ কোটি ৯৫ লাখ ৪২ হাজার ১৭৮ টাকা অবশিষ্ট থেকে যায়। এফডিআরের অবশিষ্ট অর্থ থেকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোম্পানিকে ৫ কোটি ৭ লাখ ৬৪ হাজার ৭৯১ টাকা পরিশোধে সম্মত হয়। এ কারণে কোম্পানি এফডিআরে টাকা জমা দেয়া বন্ধ করে দেয় এবং অগ্রণী ব্যাংকের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে রিট দায়ের করে। ২০১১ সালে সুদসহ এফডিআরের অর্থ কোম্পানির অনুকূলে পরিশোধের জন্য অগ্রণী ব্যাংককে নির্দেশ দেন আদালত। এ আদেশের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে আপিল করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। আপিলেও ব্যাংককে এক মাসের মধ্যে কোম্পানিকে এফডিআরের টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও টাকা না পেয়ে কোম্পানি সাপ্লিমেন্টারি রুলের জন্য আবেদন করে। এতে বলা হয়, ১৯৮৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এফডিআরে অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। কিন্তু ব্যাংক মাত্র ৮ কোটি ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে। পরবর্তী সময়ে ২০১৮ সালে আদালতের নির্দেশে আলহাজ টেক্সটাইল ও অগ্রণী ব্যাংকের যৌথ সম্মতির মাধ্যমে পাওনা টাকার পরিমাণ নির্ধারণে পিনাকী অ্যান্ড কোম্পানিকে নিরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। আর এ নিরীক্ষকের প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই অগ্রণী ব্যাংককে আলহাজ টেক্সটাইলের অনূকূলে ৩৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়ে বিষয়টির নিষ্পত্তি করেন আদালত।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: