facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

আলহাজ টেক্সকে ৫৫ কোটি টাকা দিতে অগ্রণী ব্যাংককে নির্দেশ


১৫ জানুয়ারি ২০১৯ মঙ্গলবার, ১২:২১  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


আলহাজ টেক্সকে ৫৫ কোটি টাকা দিতে অগ্রণী ব্যাংককে নির্দেশ

আলহাজ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডকে ৫৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা পরিশোধে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি আশিস রঞ্জন দাসের দ্বৈত বেঞ্চ আলহাজ টেক্সটাইল ও অগ্রণী ব্যাংকের এফডিআর-সংক্রান্ত মামলার রায় ঘোষণা করেন।

হাইকোর্টের আদেশ অনুসারে রায়ের কপি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে অগ্রণী ব্যাংককে এ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। পাশাপাশি অর্থ পরিশোধ করার সাতদিনের মধ্যে এ বিষয়ে আদালতকে অবহিত করতে অগ্রণী ব্যাংককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

রায়ের বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের আইনজীবী একেএম বদরুদ্দোজা জানান, ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ রায়ের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্রয়োজনবোধে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানান তিনি।

আলহাজ টেক্সটাইলের আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম বলেন, মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের যেকোনো রায়ের বিষয়ে কেউ চাইলে আপিল করতেই পারেন। কিন্তু এ রায়ের বিরুদ্ধে অগ্রণী ব্যাংকের আপিল করার সুযোগ নেই। কারণ অগ্রণী ব্যাংক ও আলহাজ টেক্সটাইলের যৌথ সম্মতিতে পিনাকী অ্যান্ড কোম্পানিকে নিরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। অগ্রণী ব্যাংকের সুদের হার অনুসারে ব্যাংকের কাছে আলহাজ টেক্সটাইলের পাওনা টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করাই ছিল নিরীক্ষকের দায়িত্ব।

তিনি আরো জানান, অগ্রণী ব্যাংকের সুদের হারসংক্রান্ত সার্কুলার পর্যালোচনা করে ২০১৮ সালের ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত ব্যাংকের কাছে আলহাজ টেক্সটাইলের পাওনার পরিমাণ ৫৫ কোটি ৮৩ লাখ ৪৬ হাজার ৫৭৮ টাকা নির্ধারণ করে নিরীক্ষক। তাছাড়া নিরীক্ষকের ফি ব্যাংক ও কোম্পানি যৌথভাবে পরিশোধ করেছে। নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান পিনাকী অ্যান্ড কোম্পানির প্রতিবেদন ব্যাংকের নিজস্ব প্রতিবেদন হিসেবেই আইনগতভাবে স্বীকৃত হবে। তাই এ নিরীক্ষা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আদালত যে রায় দিয়েছেন তা চ্যালেঞ্জ করে আপিল করার সুযোগ নেই।

আলহাজ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড ১৯৬১ সালে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসে নিবন্ধিত (আরজেএসসি) হয় আর ১৯৬৭ সালে এটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হয়। ১৯৭২ সালে সরকার কোম্পানিটিকে জাতীয়করণ করে এবং এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) কাছে ন্যস্ত করা হয়। পরে ১৯৮২ সালে আলহাজ টেক্সটাইলকে বেসরকারীকরণ করা হয় এবং এর দায়িত্ব আগের মালিকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ব্যবস্থাপনা হস্তান্তরের সময় ২ কোটি ২৯ লাখ ২০ হাজার ৮০৫ টাকার দায় উদ্ভূত হয়। কিন্তু এ ঋণ উদ্ভূত হয়েছিল বিটিএমসির সময়ে। তাই এ অর্থ পরিশোধের জন্য সরকার, বিটিএমসি, বিটিএমএ ও ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে কোম্পানি, বিটিএমসি ও ব্যাংকের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুসারে ঋণ পরিশোধের জন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়। এ তহবিলের ক্যাশ ক্রেডিট কোম্পানির পক্ষ থেকে এবং সুদ ব্যাংকের পক্ষ থেকে পরিশোধ করার কথা ছিল। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত এ তহবিলে ২ কোটি ৯ লাখ টাকা জমা হয়। পরে চুক্তি অনুসারে বিশেষ তহবিলটিকে স্থায়ী আমানতে (এফডিআর) রূপান্তর করা হয় এবং লিয়েন মার্ক করে অগ্রণী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে রাখা হয়। ২০০৮ সালে ঋণ পরিশোধের পর অ্যাকাউন্টে ২৪ কোটি ৯৫ লাখ ৪২ হাজার ১৭৮ টাকা অবশিষ্ট থেকে যায়। এফডিআরের অবশিষ্ট অর্থ থেকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোম্পানিকে ৫ কোটি ৭ লাখ ৬৪ হাজার ৭৯১ টাকা পরিশোধে সম্মত হয়। এ কারণে কোম্পানি এফডিআরে টাকা জমা দেয়া বন্ধ করে দেয় এবং অগ্রণী ব্যাংকের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে রিট দায়ের করে। ২০১১ সালে সুদসহ এফডিআরের অর্থ কোম্পানির অনুকূলে পরিশোধের জন্য অগ্রণী ব্যাংককে নির্দেশ দেন আদালত। এ আদেশের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে আপিল করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। আপিলেও ব্যাংককে এক মাসের মধ্যে কোম্পানিকে এফডিআরের টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও টাকা না পেয়ে কোম্পানি সাপ্লিমেন্টারি রুলের জন্য আবেদন করে। এতে বলা হয়, ১৯৮৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এফডিআরে অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। কিন্তু ব্যাংক মাত্র ৮ কোটি ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে। পরে ২০১৮ সালে আদালতের নির্দেশে আলহাজ টেক্সটাইল ও অগ্রণী ব্যাংকের যৌথ সম্মতির মাধ্যমে পাওনা টাকার পরিমাণ নির্ধারণে পিনাকী অ্যান্ড কোম্পানিকে নিরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। আর এ নিরীক্ষকের প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই গতকাল অগ্রণী ব্যাংককে আলহাজ টেক্সটাইলের অনুকূলে ৫৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়ে বিষয়টির নিষ্পত্তি করেন হাইকোর্ট।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: