facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

আলহাজ টেক্সকে পৌনে ১১ কোটি টাকা দিতেই হবে অগ্রণী ব্যাংককে


০৯ মে ২০১৯ বৃহস্পতিবার, ০৩:৩৫  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


আলহাজ টেক্সকে পৌনে ১১ কোটি টাকা দিতেই হবে অগ্রণী ব্যাংককে

আলহাজ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডকে ১০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা পরিশোধে অগ্রণী ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গতকাল আপিল বিভাগের বিচারপতি ইমান আলীর নেতৃত্বে বিচারপতি মির্জা হোসাইন হায়দার ও বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকীর বেঞ্চ আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে অগ্রণী ব্যাংককে আলহাজ টেক্সটাইলের পাওনা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি ২২ মে পাওনা পরিশোধের বিষয়টি আদালতে প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

আলহাজ টেক্সটাইলের আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী বলেন, এরই মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক আলহাজ টেক্সটাইলকে ২৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। এখন আদালতের নির্দেশনা অনুসারে ব্যাংককে ২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৯-এর ২ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ের জন্য ৮৩ লাখ টাকার সুদসহ আরো ১০ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এ টাকা পরিশোধ করে ২২ মে আদালতে প্রতিবেদন আকারে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, আলহাজ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড ও অগ্রণী ব্যাংকের মধ্যে বিবাদ বেশ পুরনো। আলহাজ টেক্সটাইল ১৯৬১ সালে প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে যাত্রা করে। ১৯৭২ সালে সরকার কোম্পানিটিকে জাতীয়করণ করে এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) কাছে ন্যস্ত করে। পরবর্তী সময়ে ১৯৮২ সালে আলহাজ টেক্সটাইলকে বেসরকারীকরণ করে এর দায়িত্ব আগের মালিকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ব্যবস্থাপনা হস্তান্তরের সময় ২ কোটি ২৯ লাখ ২০ হাজার ৮০৫ টাকার দায় থেকে যায়। কিন্তু এ দায় উদ্ভূত হয়েছিল বিটিএমসির কাছে কোম্পানিটির দায়িত্ব থাকাকালে। তাই এ অর্থ পরিশোধের জন্য সরকার, বিটিএমসি, বিটিএমএ ও ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে কোম্পানি, বিটিএমসি ও ব্যাংকের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

চুক্তি অনুসারে ঋণ পরিশোধের জন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়। এ তহবিলের ক্যাশ ক্রেডিট কোম্পানির পক্ষ থেকে এবং সুদ ব্যাংকের পক্ষ থেকে পরিশোধ করার কথা ছিল। ১৯৮৯-৯২ সাল পর্যন্ত এ তহবিলে ২ কোটি ৯ লাখ টাকা জমা হয়। পরবর্তী সময়ে চুক্তি অনুসারে বিশেষ তহবিলটিকে স্থায়ী আমানতে (এফডিআর) রূপান্তর করা হয় এবং লিয়েন মার্ক করে অগ্রণী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে রাখা হয়। ২০০৮ সালে ঋণ পরিশোধের পর অ্যাকাউন্টে ২৪ কোটি ৯৫ লাখ ৪২ হাজার ১৭৮ টাকা অবশিষ্ট থেকে যায়।

এফডিআরের অবশিষ্ট অর্থ থেকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোম্পানিকে ৫ কোটি ৭ লাখ ৬৪ হাজার ৭৯১ টাকা পরিশোধে সম্মত হয়। এ কারণে কোম্পানি এফডিআরে টাকা জমা দেয়া বন্ধ করে দেয় এবং অগ্রণী ব্যাংকের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে রিট দায়ের করে। ২০১১ সালে সুদসহ এফডিআরের অর্থ কোম্পানির অনুকূলে পরিশোধের জন্য অগ্রণী ব্যাংককে নির্দেশ দেন আদালত। এ আদেশের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে আপিল করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। আপিলেও ব্যাংককে এক মাসের মধ্যে কোম্পানিকে এফডিআরের টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও টাকা না পেয়ে কোম্পানি সাপ্লিমেন্টারি রুলের জন্য আবেদন করে। এতে বলা হয় ১৯৮৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এফডিআরে অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। কিন্তু ব্যাংক মাত্র ৮ কোটি ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে।

পরবর্তীতে ২০১৮ সালে আদালতের নির্দেশে আলহাজ টেক্সটাইল ও অগ্রণী ব্যাংকের যৌথ সম্মতির মাধ্যমে পাওনা টাকার পরিমাণ নির্ধারণে পিনাকী অ্যান্ড কোম্পানিকে নিরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। আর এ নিরীক্ষকের প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই অগ্রণী ব্যাংককে আলহাজ টেক্সটাইলের অনুকূলে ৫৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়ে বিষয়টির নিষ্পত্তি করেন হাইকোর্ট। ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে এ বছরের ১০ মার্চ দেয়া আদেশে ব্যাংককে ৪ এপ্রিলের মধ্যে ২৫ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এরই মধ্যে আলহাজ টেক্সটাইলকে ২৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে অগ্রণী ব্যাংক। সর্বশেষ গতকাল আপিল বিভাগের পক্ষ থেকে ১০ কোটি ৮৩ টাকা পরিশোধের আদেশের ফলে আলহাজ টেক্সটাইল ও অগ্রণী ব্যাংকের মধ্যে পাওনা টাকা নিয়ে বিবাদের সমাপ্তি ঘটল।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: