facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৪ এপ্রিল বুধবার, ২০২৪

Walton

আর্থিক খাতের ২৩ কোম্পানির সম্মিলিত মুনাফায় ধস


২৪ নভেম্বর ২০১৯ রবিবার, ০১:১২  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


আর্থিক খাতের ২৩ কোম্পানির সম্মিলিত মুনাফায় ধস

অনিয়ম, দুর্নীতি ও খেলাপি ঋণ সংকটে বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (এনবিএফআই)। নিট সুদ আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি পুঁজিবাজারে লোকসান ও খেলাপি ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি সংরক্ষণের পরিমাণ বাড়ায় মুনাফায় বড় রকমের ধাক্কা খেয়েছে এনবিএফআই খাত। চলতি হিসাব বছরের নয় মাসে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২৩ এনবিএফআই প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত নিট মুনাফা কমে গেছে ৭৬ শতাংশ। এর মধ্যে ছয় এনবিএফআই প্রতিষ্ঠান পড়েছে লোকসানে। এ খাতটির কোম্পানি পিপলস লিজিং অ্যান্ড সার্ভিসেস অবসায়ন প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, আর্থিক খাতে নানা ধরনের সংকটের মধ্যেও চলতি হিসাব বছরের নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) এনবিএফআই খাতের ঋণ বিতরণের পরিমাণ বেড়েছে। এ সময় এনবিএফআই খাতের মোট ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ৫৪ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। ঋণ বিতরণ বাড়ায় খাতটির সুদ আয়ও বেড়েছে। আবার আমানতের পরিমাণ কিছুটা কমলেও সুদ বাবদ খরচ বেড়েছে। এর ফলে নিট সুদ আয় কমে গেছে।

মূলত পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের অবসায়নের কারণে পুরো এনবিএফআই খাতের ওপর আমানতকারীদের আস্থাহীনতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। আমানত প্রত্যাহারের চাপে তারল্য সংকটের মধ্যে পড়েছে খাতটির অধিকাংশ কোম্পানি। এমন পরিস্থিতিতে উচ্চ সুদে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে আমানত নিতে হয়েছে খাতটির কোম্পানিগুলোকে, যা তাদের সুদ ব্যয় বাড়িয়ে তুলেছে।

চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত এনবিএফআই খাতের সুদ আয় হয়েছে ৫ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ৮ শতাংশ বেশি। এ সময় বিভিন্ন ধরনের আমানতের বিপরীতে এনবিএফআই খাতের সুদ বাবদ ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় সাড়ে ১২ শতাংশ বেশি। এর ফলে চলতি তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত খাতটির নিট সুদ আয় কমেছে ১২ দশমিক ৩ শতাংশ। এ সময় নিট সুদ আয় হয়েছে ৬৮৭ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৭৮৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

২০১৮ সালের ধারাবাহিকতায় চলতি বছরও পুঁজিবাজারে দরপতন অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে এনবিএফআই খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ করে বড় অঙ্কের লোকসানের মুখে পড়েছে। এ লোকসানের কারণে সঞ্চিতি সংরক্ষণের পরিমাণও বেড়েছে। এক বছরের ব্যবধানে খাতটির বিনিয়োগের পরিমাণও কমেছে।

চলতি বছরের নয় মাসে এনবিএফআই খাতের বিনিয়োগের পরিমাণ হচ্ছে ১৩ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ২৭৭ কোটি টাকা কম। পুঁজিবাজারে মন্দার কারণে বিনিয়োগ থেকে খাতটির আয়ও আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত বিনিয়োগ থেকে খাতটির আয় হয়েছে ৫৫৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ কম। এ সময় কমিশন, এক্সচেঞ্জ ও ব্রোকারেজ থেকেও আয় কমেছে ১৫ শতাংশ। এর ফলে পুরো খাতটির পরিচালন আয় কমেছে ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে এনবিএফআই খাতের পরিচালন আয় হয়েছে ১ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২ হাজার ১৩ কোটি টাকা।

এদিকে পরিচালন আয় কমলেও ব্যয় বেড়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। আবার পুঁজিবাজারে লোকসান ও খেলাপি ঋণের কারণে খাতটির সঞ্চিতি সংরক্ষণের পরিমাণও বেড়েছে। চলতি বছরের নয় মাসে এনবিএফআই খাতের সঞ্চিতি সংরক্ষণের পরিমাণ ছিল ৩১৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। চলতি বছরের নয় মাসে এনবিএফআই খাতের নিট মুনাফা হয়েছে ১৩৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৫৭২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে খাতটির নিট মুনাফা কমেছে ৭৬ শতাংশ।

চলতি এনবিএফআই খাতের মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড। পুঁজিবাজার মন্দার কারণে এ কোম্পানির সাবসিডিয়ারিগুলো ভালো ব্যবসা করতে পারেনি। এতে তাদের আয় কিছুটা কমলেও এনবিএফআই খাতের মধ্যে নিট মুনাফায় শীর্ষে রয়েছে। চলতি বছরের নয় মাসে আইডিএলসি ফাইন্যান্স ১৩০ কোটি ৮০ লাখ টাকা নিট মুনাফা করেছে। নিট মুনাফার হিসেবে পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে উত্তরা ফাইন্যান্স ও ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং লিমিটেড। এ দুই কোম্পানির নিট মুনাফা ছিল যথাক্রমে ১০৪ কোটি ও ৮২ কোটি টাকা।

অবশ্য প্রবৃদ্ধির বিচারে নিট মুনাফায় সবচেয়ে বেশি এগিয়ে বে-লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। আগের বছরের তুলনায় এ কোম্পানির নিট মুনাফা বেড়েছে ২২৩ শতাংশ। আগের বছর কোম্পানিটি লোকসানে ছিল। একইভাবে আগের বছরের লোকসান কাটিয়ে চলতি বছর মুনাফায় ফিরেছে প্রিমিয়ার লিজিং ও প্রাইম ফাইন্যান্স। লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের মুনাফাও শতভাগ বেড়েছে। এর বাইরে আইপিডিসি, ইসলামিক ফাইন্যান্স ও বিআইএফসির মুনাফাও বেড়েছে।

চলতি বছরের নয় মাসে এনবিএফআই খাতের ছয় প্রতিষ্ঠান লোকসানে রয়েছে। এগুলো হচ্ছে বিআইএফসি, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ও মাইডাস ফাইন্যান্স। এছাড়া মুনাফা কমেছে ফিনিক্স ফাইন্যান্স, ইউনাইটেড ফাইন্যান্স, এফএএস ফাইন্যান্স, বিডি ফাইন্যান্স ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের।

এনবিএফআই খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে বিআইএফসির। এ কোম্পানির বিতরণকৃত ঋণের ৯৭ শতাংশই খেলাপি। আইসিবির বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৩০ শতাংশ খেলাপি। এর বাইরে প্রিমিয়ার লিজিং, প্রাইম ফাইন্যান্স, মাইডাস ও এফএএস ফাইন্যান্সের উল্লেখযোগ্য পরিমাণের ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: