২৩ মে ২০১৯ বৃহস্পতিবার, ০২:৫৪ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
গোজামিল আর্থিক প্রতিবেদন দিয়ে আইপিও অনুমোদনের অভিযোগ ওঠা কপারটেকের নিরীক্ষা ফার্ম আহমেদ অ্যান্ড আখতারের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সহযোগিতা না পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা করতে পারছে না ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি)।
অভিযোগ উঠেছে কোম্পানির যোগসাজসে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়ায় থাকা কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের আর্থিক প্রতিবেদনে নানা অনিয়ম নিয়ে ডিবিএ-এর অভিযোগ ও কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর আটকে যায় কোম্পানিটির লেনদেন।
বিনিয়োগকারীরা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, কপারটেককে যদি এবার ছাড় দেওয়া হয় তাহলে ভবিষ্যতে আর কোনো কোম্পানি কাউকেই তোয়াক্কা করবে না।
সম্প্রতি বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলকে (এফআরসি) জানিয়েছে আইসিএবি। এর আগে ১৪ মে কপারটেকের আর্থিক প্রতিবেদন পুনঃনিরীক্ষা করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য আইসিএবিকে চিঠি দিয়েছিল এফআরসি।
এ বিষয়ে আইসিএবির প্রেসিডেন্ট এএফ নেসারউদ্দিন বলেন, এফআরসির কাছ থেকে চিঠি পেয়ে আমরা কপারটেকের নিরীক্ষকের কাছে নিরীক্ষাসংশ্লিষ্ট কাগজপত্র চেয়েছিলাম। কিন্তু নিরীক্ষা ফার্ম আহমেদ অ্যান্ড আখতারের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, তাদের প্রতিষ্ঠানের পার্টনার চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাজে দেশের বাইরে থাকায় চলতি মাসের ৩০ তারিখের আগে তারা কোনো সহযোগিতা করতে পারবে না। অন্যদিকে এফআরসির পক্ষ থেকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আমাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। নিরীক্ষকের অসহযোগিতার কারণে আমাদের পক্ষে কপারটেকের আর্থিক প্রতিবেদন পুনঃনিরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি আমরা চিঠির মাধ্যমে এফআরসিকে জানিয়ে দিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, নিরীক্ষা ফার্মটির পার্টনার দেশের বাইরে থাকলেও তিনি তো আর সঙ্গে করে কাগজপত্র বিদেশে নিয়ে যাননি। তাই তারা চাইলেই আমাদের কাগজপত্র দিয়ে সহযোগিতা করতে পারতেন। তাছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে আইসিএবিকে সহযোগিতা করার বিষয়ে নিরীক্ষক ও নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির এ ধরনের অপেশাদার ও অসহযোগিতামূলক আচরণের বিষয়টি পরবর্তী কাউন্সিল মিটিংয়ে উত্থাপন করা হবে। নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এর আগেও আমাদের কাছে বেশকিছু অভিযোগ এসেছে। কপারটেকের আর্থিক প্রতিবেদনের ইস্যুসহ নিরীক্ষা ফার্মটির বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলো আইসিএবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি (আইডিসি) তদন্ত করে দেখবে বলে জানান তিনি।
আইপিওর চাঁদাগ্রহণ ও শেয়ার বরাদ্দের লটারি সম্পন্ন করা কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের প্রসপেক্টাসে উপস্থাপিত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের যথার্থতা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের উদ্যোগ নেয় এফআরসি ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে এফআরসির পক্ষ থেকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন পুনঃনিরীক্ষার পাশাপাশি নিরীক্ষকের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে আইসিএবিকে চিঠি দেয়া হয়। আর ৯ মে ডিএসইর পর্ষদ সভায় কপারটেকের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পর্ষদ সভা শেষে ডিএসইর পরিচালক মো. রকিবুর রহমান জানিয়েছিলেন, কপারটেকের আইপিও প্রসপেক্টাসের আর্থিক তথ্যে গরমিলের বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে এসেছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) পক্ষ থেকেও ডিএসইর কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাই পর্ষদ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে কপারটেকের আইপিও প্রসপেক্টাস পর্যালোচনা করে কোনো গরমিল রয়েছে কিনা, তা দেখতে বলা হয়েছে। কোম্পানিটির আর্থিক তথ্যে কোনো গরমিল থাকলে সেটি বিএসইসিকে অবহিত করা হবে।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।