facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪

Walton

আত্মঘাতী আশরাফুল ছিল জেএমবির রাজশাহী অঞ্চলের সামরিক কমান্ডার


১৪ মে ২০১৭ রবিবার, ০৫:০২  পিএম

রাজশাহী করেসপন্ডেন্ট

শেয়ার বিজনেস24.কম


আত্মঘাতী আশরাফুল ছিল জেএমবির রাজশাহী অঞ্চলের সামরিক কমান্ডার

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের বেনীপুরের মাঠের মধ্যে জঙ্গি আস্তানায় আত্মঘাতী আশরাফুল ইসলাম ছিল জেএমবির রাজশাহী অঞ্চলের সামরিক কমান্ডার।

বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার ও আইটি বিশেষজ্ঞ আশরাফুল চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে পুলিশের তাড়া খেয়ে আগের দিন বেনীপুরের আস্তানায় আশ্রয় নিয়েছিল। আর ওই আস্তানায় আরেক আত্মঘাতী আলামিন ও নাচোলে গ্রেপ্তার হারুন-অর রশিদ ছিল জেএমবির ইউনিট কমান্ডার। গ্রেপ্তার হারুনের তথ্যানুযায়ী বেনীপুরের জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মেলে বলে জানান নাচোল থানার ওসি ফাছির উদ্দিন।

জঙ্গি হারুনের বরাত দিয়ে ওসি ফাছির উদ্দিন জানান, বেনিপুরের আস্তানায় সুইসাইট ভেস্ট পড়ে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিহত আশরাফুল ইসলাম ছিল জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) রাজশাহী অঞ্চলের সামরিক কমান্ডার। তার নেতৃত্বে রাজশাহী অঞ্চলে জেএমবি সংঘঠিত হয় এবং অস্ত্র-গোলাবারুদ মজুদ করা হতো। আশরাফুল বোমা তৈরীতেও পারদর্শি ছিল। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার দেবীনগর ইউনিয়নের চর চাকলা গ্রামের আব্দুল হকের ছেলে আশরাফুল কবে নাগাদ জেএমবিতে যোগ দিয়েছে তা হারুন জানাতে পারেনি বলে জানান ওসি ফাছির উদ্দিন।

ওসি বলেন, বেনীপুরের জঙ্গি আস্তানায় আত্মঘাতী আলামিন ও নাচালে গ্রেপ্তার হারুন ছিল জেএমবির ইউনিট কমান্ডার। আশরাফুলসহ জেএমবির নেতারা আলামিন ও হারুনের বাড়িতে গোপন বৈঠক করতো বলেও জানান ওসি।

যেভাবে দেবীপুর আস্তানার সন্ধান

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার জেএমবির ইউনিট কমান্ডার হারুন অর রশিদের তথ্যে গোদাগাড়ীর বেনীপুরের জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মেলে। তবে ওই জঙ্গি আস্তানা ঘিরে রাখার পর গোদাগাড়ী থানার ওসি হিপজুর আলম মুন্সি জানিয়েছিলেন পুলিশ সদর দপ্তরের এলআইসি (লফুল ইন্টারসেপশন সেন্টার) টিমের সদস্যরা এ জঙ্গি আস্তানার সন্ধান দেয়।

ফাছির উদ্দিন বলেন, ফেরি করে কাপড় বিক্রেতা সেজে জেএমবির প্রচারণা চালানোর গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ৯ মে দিবাগত রাত ১টার দিকে নাচোল উপজেলার গুঠইল গ্রামে জেএমবির ইউনিট কমান্ডার হারুন-অর-রশিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ওই বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় জেএমবি সদস্য কামাল উদ্দিনকে। পরে হারুনের বাড়িতে তল্লাশি করে সাড়ে চার কেজি গামপাউডার ও ২২টি জিহাদী বই পাওয়া যায়। পরে হারুন জানায় তাদের নেতা আশরাফুল। তাকে গ্রেপ্তারে ওই রাতে হারুন ও কামালকে নিয়ে নাচোলের সাতটি বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। ওই অভিযানে বেড়াচকি গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয় জেএমবি সদস্য নাসিম রেজা শাহীন ও শ্রীরামপুর গ্রামের ফিরোজকে। ওই সাতটি বাড়ির যেকোনো একটিতে আশরাফুলের অবস্থান ছিল। কিন্তু হারুন গ্রেপ্তারের পর আশরাফুল রাতেই নাচোল থানা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় বলে জানান ওসি ফাছির উদ্দিন।

ওসি বলেন, গ্রেপ্তার হারুনসহ চারজনকে ১০ মে দিনভর নাচোল থানা হাজতে কয়েকদফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এসময় হারুণ জানায় তাদের অস্ত্র ও বোমা গোদাগাড়ীর বেনীপুর আলামিনের বাড়িতে রয়েছে। এর পর বিষয়টি চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলামকে জানানো হয়। ওই রাতেই পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে চারজনকে নিয়ে গোদাগাড়ী যাওয়া হয়। এর পর হারুনের দেখিয়ে দেওয়া আলামিনের বাড়ি রাত ১টার দিকে তারা ঘিরে ফেলে। রাত ৩টার দিকে রাজশাহী জেলা পুলিশকে ওই বাড়ি বুঝিয়ে দিয়ে তারা সেখান থেকে চলে যায়। তবে তখন পর্যন্ত জানা যায়নি ওই বাড়িতে আশরাফুল ছিল বলে জানান ওসি ফাছির উদ্দিন।

তিনি বলেন, গোদাগাড়ী থেকে ফিরে পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে শিবগঞ্জে অভিযান চালানো হয়। হারুনের দেওয়া তথ্যে তারা শিবগঞ্জ উপজেলার শিবনগর কাইঠ্যাপাড়া গ্রামের বাবু, রাঘবপুর গ্রামের আজিজুল হক ও পরে সদর উপজেলার দেবীনগর ইউনিয়নের ফাটাপাড়া গ্রামের আব্দুল হাকিমের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে দেবীনগর চর চাকলা গ্রামে আশরাফুলের বাড়িতেও অভিযান চালানো হলেও সেখানে কিছু পাওয়া যায়নি। তবে বাবুর বাড়ি থেকে একটি ড্রামে পুতে রাখা ৪২০ প্যাকেটের সাড়ে ৫২ কেজি বোমা তৈরীর পাওয়ার জেল উদ্ধার করা হয় বলে জানান তিনি।

ওসি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের তথ্যে জেএমবির রাজশাহী অঞ্চলের কয়েকজন নেতার নাম তারা পেয়েছে। যাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

গোদাগাড়ী থানার ওসি হিপজুর আলম মুন্সি বলেন, আশরাফুল ইসলাম রাজশাহী অঞ্চলের জেএমবির কমান্ডার ছিল বলেও নিশ্চিত করেছে জঙ্গি আস্তানায় আত্মসমর্পণকারী নারী সুমাইয়া। সে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার এবং আইটি ও বোমা তৈরীতে বিশেষজ্ঞ বলে সুমাইয়া জানে। আশরাফুলের ব্যাপারে সুমাইয়ার দেওয়া তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান ওসি হিফজুর আলম।

তিনি বলেন, বেনীপুরের জঙ্গি আস্তানা চিনিয়ে দেওয়ার সময় পুলিশ সদর দপ্তরের এলআইসি  (লফুল ইন্টারসেপশন সেন্টার) টিমের সদস্যরা ছিল। তারা এ অঞ্চলে জঙ্গিদের নিয়ে কাজ করছে। তাই সেদিন বলা হয়েছিল এলআইসি সদস্যরা ওই বাড়িটি সন্ধান দেয় বলে জানান ওসি।

গত ১১ মে সকালে গোদাগাড়ীর বেনীপুরের মাঠের মধ্যে ওই বাড়িতে অপারেশন ‘সান ডেভিল’ অভিযানের প্রস্তুতির সময় সাজ্জাদসহ পাঁচ জঙ্গি একসঙ্গে বের হয়ে এসে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের উপর হামলা চালায়। এসময় তারা দুইটি আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এসময় পাঁচ জঙ্গি ও এক দমকলকর্মী নিহত হন। পরে দুই শিশুকে নিয়ে আত্মাসমর্পণ করেন নারী জঙ্গি সুমাইয়া।


শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: