facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৯ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪

Walton

আইসিবির ভূমিকায় পুঁজিবাজারে উত্থান-পতন, বিভ্রান্ত বিনিয়োগকারীরা


১৪ আগস্ট ২০১৮ মঙ্গলবার, ০৮:৪৬  এএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


আইসিবির ভূমিকায় পুঁজিবাজারে উত্থান-পতন, বিভ্রান্ত বিনিয়োগকারীরা

উৎপাদন ও সেবামুখী খাতের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আর্থিক খাতের অনেক শেয়ারের দর কমেছে। গত কয়েকদিন ধরে অধিকাংশ শেয়ারের দর কমার পরও শুধু ব্যাংক খাতের শেয়ারের দর বৃদ্ধি বাজারমূল্য সূচককে ঊর্ধ্বমুখী রেখেছিল। গতকাল সোমবার আর তেমনটি ঘটেনি। ব্যাংকের বেশিরভাগ শেয়ারের দর কমায় সূচকেও পতন হয়েছে, সঙ্গে লেনদেনও কমেছে।

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে গতকাল প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৩৮ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ২০০টিরই বাজার দর কমেছে, যা মোটের ৫৯ শতাংশ। বিপরীতে ১০২টির বা ৩০ শতাংশের দর বেড়েছে ও অপরিবর্তিত ছিল ৩৬টির দর।

ব্যাংকসহ প্রায় সব খাতের অধিকাংশ শেয়ারের দর কমার কারণে এ বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স রোববারের শেষ অবস্থানের তুলনায় ২৮ পয়েন্ট হারিয়ে ৫৩৭৮ পয়েন্টে নেমেছে। তবে দিনের সর্বোচ্চ অবস্থানের তুলনায় প্রায় ৭৩ পয়েন্ট কমেছে। কারণ লেনদেনের শুরুতে সূচকটি ৪২ পয়েন্ট বেড়ে ৫৪৫০ পয়েন্ট ছাড়িয়েছিল।

অন্যদিকে চট্টগ্রামকেন্দ্রিক দ্বিতীয় শেয়ারবাজার সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৪৪ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১৫২টির দর কমেছে, যা মোটের ৬২ শতাংশেরও বেশি। বিপরীতে ৭০টির বা প্রায় ২৯ শতাংশের দর বেড়েছে এবং অপরিবর্তিত ছিল বাকি ২২টির দর। এতে এ বাজারের প্রধান সূচক সিএসসিএক্স প্রায় ৫২ পয়েন্ট হারিয়ে ১০০১৪ পয়েন্টের নিচে নেমেছে।

শুধু শেয়ারদর ও সূচকই নয়, গতকাল উভয় বাজারের লেনদেনের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমেছে। দুই শেয়ারবাজার মিলে কেনাবেচা হয়েছে ৬৮১ কোটি টাকা মূল্যের শেয়ার। রোববারের তুলনায় যা ১৮৪ কোটি টাকা বা সোয়া ২১ শতাংশ কমেছে। এর মধ্যে ডিএসইর লেনদেন ১৭০ কোটি টাকা কমে ৬৪৮ কোটি ২৩ লাখ টাকায় নেমেছে। সিএসইতে কেনাবেচা হয়েছে পৌনে ৩৩ কোটি টাকার শেয়ার।

গত কয়েকদিনের বাজারের ক্রমাগত অবস্থান পরিবর্তনের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বেশ বিভ্রান্ত বলে জানান ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তারা বলেন, গত সপ্তাহ থেকে হঠাৎ ব্যাংকের শেয়ারের দরবৃদ্ধি পেতে শুরু করে। একই সঙ্গে দরবৃদ্ধির ধারায় থাকা বস্ত্রসহ অন্য সব খাতের শেয়ারদর কমতে থাকে। যখন লভ্যাংশ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে উৎপাদন ও সেবামুখী খাতে বিনিয়োগ বাড়ছিল, তখন অনেক বিনিয়োগকারী করণীয় নির্ধারণ করতে পারছেন না।

এদিকে শেয়ারবাজার সংশ্নিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বাজার ধারার এমন পরিবর্তনের প্রধান ভূমিকা রেখেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিনিয়োগ সংস্থা ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। প্রতিষ্ঠানটি একদিকে ব্যাংকের শেয়ার কিনেছে, বিপরীতে বিক্রি করেছে অন্য সব খাতের শেয়ার। আইসিবির বিনিয়োগ ধারার পরিবর্তন আগাম জেনে প্রতিষ্ঠানটিকে অনুসরণ করেছে প্রাতিষ্ঠানিক ও কৌশলী বড় ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের একটা অংশ। গত ডিসেম্বরেও একই ঘটনা ঘটেছিল। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর লভ্যাংশ ঘোষণার মৌসুমের শুরুতে প্রতিষ্ঠানটি এ তিন খাতের শেয়ার বিক্রি করেছিল। তাতে দরপতন শুরু হয়েছিল।

আইসিবি সূত্র জানিয়েছে, গত কয়েক মাসের ক্রমাগত দরপতনে ব্যাংকের শেয়ারগুলোর দর অনেকটা কমে গিয়েছিল। বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকের শেয়ার ছিল অনেক বেশি আকর্ষণীয়। আইসিবি এ খাতে বিনিয়োগ করেছে। আবার বিনিয়োগের অর্থের সংকুলানের জন্য বস্ত্রসহ অন্য খাতের শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে। তবে লভ্যাংশ ঘোষণার সময়ে উৎপাদনশীল খাতের শেয়ার বিক্রি কেন করছে দায়িত্বশীল এ প্রতিষ্ঠান- তার ব্যাখ্যা তাদের কাছ থেকে মেলেনি।

সংস্থাটির এমন ভূমিকাকে নেতিবাচক আখ্যা দিয়ে শীর্ষ এক ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা বলেন, কারসাজির বিপরীতে লভ্যাংশকেন্দ্রিক বিনিয়োগকে আইসিবির এ ভূমিকা নিরুৎসাহিত করবে। এ বিষয়ে জানতে কয়েক দফায় আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছানাউল হকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়; কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গতকালও ব্যাংকসহ নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানির শেয়ারের দরে বড় উত্থান দিয়ে দিনের লেনদেন শুরু হয়। যার প্রভাব সূচকেও ছিল। কিন্তু এ অবস্থা ১৫ মিনিটও স্থায়ী হয়নি। লেনদেন সময় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দরপতন বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত নয় কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ১৪টির দর কমেছে এবং অপরিবর্তিত সাতটির দর। এতে খাতটির সার্বিক শেয়ারের দর কমেছে শূন্য দশমিক ৪৫ শতাংশ। খাতটির দরপতনের মধ্যেও রূপালী এবং সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারদর ৪ শতাংশ হারে বেড়েছে। বিপরীতে পূবালী ব্যাংকের শেয়ারদর সর্বাধিক সাড়ে ৩ শতাংশ কমেছে।

ব্যাংকের শেয়ারদর কমলেও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বীমা খাতে ছিল মিশ্রধারা। ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ১৩ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে আটটির দর কমেছে। এ খাতের মাইডাস ফাইন্যান্সের শেয়ার সার্কিট ব্রেকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ দরে কেনাবেচা হয়েছে। আর বীমা খাতের ২৩টির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ২১টির দর কমেছে। রূপালী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর সাড়ে ৮ শতাংশ বেড়েছে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতেও ছিল এ মিশ্রধারা। আটটির দর বৃদ্ধির বিপরীতে ১০টির দর কমেছে।

বিপরীতে অন্য সব খাতের অধিকাংশ শেয়ারের দর কমেছে। যেমন প্রকৌশল খাতের নয়টির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ২৫টির দর কমেছে। ওষুধ ও রসায়ন খাতের আটটির দর বেড়েছে, কমেছে ২০টির। বস্ত্র খাতের চার কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ৪৩টিরই দর কমেছে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: