facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার, ২০২৪

Walton

আইপিও : ৮৯ টির মধ্যে ৬০ টির বাজার দরই ইস্যু মূল্যের বেশি


১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার, ০৩:২০  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


আইপিও : ৮৯ টির মধ্যে ৬০ টির বাজার দরই ইস্যু মূল্যের বেশি

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) ২০১১ সালে চেয়ারম্যান হিসাবে ড. এম খায়রুল হোসেনের দায়িত্ব নেওয়ার পরে ৯০টি কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ওইসব কোম্পানিগুলো গড়ে ২২ টাকা ইস্যু মূল্যে শেয়ার ইস্যু করেছে। যেসব কোম্পানির গড় শেয়ার দর বাজারের চলমান মন্দাবস্থায় রয়েছে ৩৪ টাকায়। যা চলতি বছরের শুরুতে ছিল ৪০ টাকা।

খায়রুল হোসেনের নেত্বতাধীন কমিশনের বিগত ৮ বছরে আইপিও অনুমোদন দেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে সামিট পূর্বাঞ্চল পাওয়ার একই গ্রুপের সামিট পাওয়ারের সঙ্গে একীভূতকরন হয়েছে। যাতে এখন আর সামিট পূর্বাঞ্চলের অস্তিত্ব নেই। বাকি ৮৯টি কোম্পানির মধ্যে ৬০টি বা ৬৭.৪২ শতাংশ ইস্যু মূল্যের উপরে রয়েছে। বাকি ২৯টি বা ৩২.৫৮ শতাংশ কোম্পানি ইস্যু মূল্যের নিচে অবস্থান করছে। তবে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে এই অবস্থা শোচণীয়। ওইসব দেশে ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে আসা কোম্পানির হার বেশি।

দেখা গেছে, ভারতে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত ৫০টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। এরমধ্যে ২৪টি বা ৪৮ শতাংশ ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে এসেছে। এছাড়া মালয়েশিয়ায় ২০১৮ সালের মার্চ থেকে ২০১৯ সালের মে পর্যন্ত সময়ে তালিকাভুক্ত হওয়া ২০টি কোম্পানির মধ্যে ৪টি বা ২০ শতাংশ, পাকিস্তানে ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত তালিকাভুক্ত হওয়া ৩টি কোম্পানির মধ্যে ২টি বা ৬৬.৬৭ শতাংশ এবং হংকংয়ে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের মে পর্যন্ত সময়ে তালিকাভুক্ত হওয়া ১৬০টি কোম্পানির মধ্যে ৮০টি বা ৫০ শতাংশ ইস্যু মূল্যের নিচে লেনদেন হচ্ছে।

এদিকে ২০১৭ সালে মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হওয়া ৮৯টি (এসএমইসহ) কোম্পানির মধ্যে ২০টির বা ২২ শতাংশের দর ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে এসেছে। আর লেনদেনের প্রথমদিনেই ২১টি বা ২৪ শতাংশ ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে যায়। এছাড়া ২০১৭ সালে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান বোর্ডে তালিকাভুক্ত হওয়া ৩৬টি কোম্পানির মধ্যে ২২টি বা ৬১ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর গত ২৫ এপ্রিল ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের আইপিও’র দর ভালো অবস্থানে আছে। অন্যান্য দেশে প্রথমদিনেই ইস্যু মূল্যের নিচে লেনদেন হওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। যা বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে হয় না। তবে লেনদেনের শুরুতে লক-ইনের কারনে অনেক সময় কৃত্রিম সংকটের মাধ্যমে শেয়ারের অস্বাভাবিক উত্থান ঘটে। এরপরে লক-ইন পিরিয়ড শেষে শেয়ারের সরবরাহ বেড়ে ওই কৃত্রিম দরে পতন হয়। যাতে লোকসানে পড়ে সাধারন বিনিয়োগকারীরা।

দেশের শেয়ারবাজারের মন্দাবস্থায় ও কিছু কোম্পানির ব্যবসায় অবনতির কারণে ২৯টি বা ৩২.৫৮ শতাংশ শেয়ার ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে এসেছে। তবে চলতি বছরের শুরুতে এ সংখ্যা ছিল ২০টি বা ২২.৪৭ শতাংশ। তবে বর্তমান কমিশন যতগুলো কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দিয়েছে, লেনদেনের প্রথম দিন তার একটিও ইস্যু মূল্যের নিচে নামেনি। এছাড়া প্রত্যেকটি আইপিওতে কয়েকগুণ আবেদন জমা পড়ে। তবে শেয়ারবাজারের চলমান অবস্থায় নিরীক্ষা মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সম্প্রতি একটি কোম্পানির তালিকাভুক্তির আগে ব্যাপক আলোচনায় উঠে আসে নিরীক্ষকদের নিরীক্ষা মান। যা ওই কোম্পানির আর্থিক হিসাব নিয়ে প্রশ্ন উঠার পরে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) নির্দেশে তদন্তে নামে দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি)। তবে সেই তদন্তে সহযোগিতা না করায় নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান আহমেদ অ্যান্ড আক্তারের প্রাকটিসিং লাইসেন্স নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেয় আইসিএবি। এর মাধ্যমে প্রশ্নবিদ্ধ রয়েছে কোম্পানিটির নিরীক্ষা। তাই ভবিষ্যতে নিরীক্ষা মান উন্নয়নে নিয়ন্ত্রক সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা দরকার বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাহলে ভবিষ্যতে ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে আসা কোম্পানির হার কমবে বলে তাদের বিশ্বাস।

ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে আসা ২৯টি কোম্পানির মধ্যে বুক বিল্ডিংয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বা যোগ্য বিনিয়োগকারীদের নির্ধারিত ইস্যু মূল্যের ৩টি কোম্পানিও রয়েছে।

২০১৫ সালের সংশোধিত পাবলিক ইস্যু রুলস অনুযায়ি, বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ইস্যু মূল্য নির্ধারন এককভাবে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের হাতে। এক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জ ও বিএসইসির কোন ভূমিকা থাকে না। কিন্তু সেই যোগ্য বিনিয়োগকারীদের মূল্যায়িত ৫টি কোম্পানির মধ্যে ৩টি বা ৬০ শতাংশ কোম্পানি ইস্যু মূল্যের নিচে অবস্থান করছে।

বুক বিল্ডিংয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আমরা নেটওয়ার্ক, এসকোয়্যার নিট কম্পোজিট, বসুন্ধরা পেপারস মিল, আমান কটন ফাইব্রাস ও রানার অটোমোবাইলসের ইস্যু দর নির্ধারন করে। তাদের এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে এসকোয়্যার নিট কম্পোজিট, বসুন্ধরা পেপারস মিল ও আমান কটন ফাইবার্সের শেয়ার দর এখন ইস্যু মূল্যের নিচে।

ইস্যু মূল্য নির্ধারন প্রক্রিয়া নিয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, কোন কোম্পানির আইপিও দর কমিশন নির্ধারন করে না। ফিক্সড প্রাইস মেথডের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি, ইস্যু ম্যানেজার ও নিরীক্ষকের ডিউ ডিলিজেন্স সনদ দেওয়ার পরে কমিশন ডিসক্লোজারস ভিত্তিতে আইপিও অনুমোদন দেয়। আর প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বা যোগ্য বিনিয়োগকারীরা দর নির্ধারন করে। এক্ষেত্রে কমিশন থেকে শুরু করে কোন স্টক এক্সচেঞ্জের ভূমিকা থাকে না।

 

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন:

শেয়ারবাজার -এর সর্বশেষ