facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৪ এপ্রিল বুধবার, ২০২৪

Walton

আইপিওতে ৩০ কোটি টাকা তুলতে প্রিমিয়াম নিতে পারবে না কোম্পানি


২৬ এপ্রিল ২০১৭ বুধবার, ০৯:৪৩  এএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


আইপিওতে ৩০ কোটি টাকা তুলতে প্রিমিয়াম নিতে পারবে না কোম্পানি

শেয়ারবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) প্রক্রিয়ায় মূলধন সংগ্রহ করতে চাইলে কোনো কোম্পানিকে প্রিমিয়াম ছাড়াই কমপক্ষে ৩০ কোটি টাকার মূলধন তুলতে হবে। অর্থাৎ অভিহিত মূল্য ১০ টাকা দরে কমপক্ষে তিন কোটি শেয়ার বিক্রি করতে হবে। ফিক্সড প্রাইস বা বুক বিল্ডিং উভয় পদ্ধতির ক্ষেত্রে এ শর্ত বাধ্যতামূলক হবে।

আইপিও আইন বা পাবলিক ইস্যু বিধিমালার অধিকতর সংশোধনের ক্ষেত্রে এমন পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরই মধ্যে এ আইন সংশোধনের প্রাথমিক খসড়া হয়েছে।

সংস্থার শীর্ষ এক কর্মকর্তা সমকালকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

ওই কর্মকর্তা বলেন, আইপিওর ক্ষেত্রে এ শর্ত আরোপ হলে বুক বিল্ডিং প্রক্রিয়ায় কোনো কোম্পানির শেয়ারদর বেশি নির্ধারিত হওয়ায় যদি তিন কোটির কম শেয়ার ইস্যু করতে হয়, তবে আইপিওটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হবে। এ ছাড়া বুক বিল্ডিং প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ারদর নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ইলেট্রনিক বিডিং প্রক্রিয়ায় যে দর প্রস্তাব করবেন, সে দরেই শেয়ার কিনতে হবে। অর্থাৎ
বাংলাদেশের আইপিও পদ্ধতিতে ডাচ্-অকশন পদ্ধতি আংশিকভাবে অনুসরণের পরিকল্পনা চলছে।

বিএসইসির কর্মকর্তারা জানান, আইপিওর সংশোধন খসড়ায় সর্বশেষ তিন হিসাব বছরে নেট অপারেটিং ক্যাশ-ফ্লো থাকার শর্ত প্রত্যাহার করা হবে। ক্যাটাগরি অনুযায়ী প্রাতিষ্ঠানিক কোটা বরাদ্দ (নির্দিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক কোটা ১০ শতাংশ) প্রত্যাহার করা হবে। তা ছাড়া কোনো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এককভাবে সর্বোচ্চ দুই শতাংশ শেয়ার ক্রয়ের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, পারস্পরিক যোগসাজশে বুক বিল্ডিং প্রক্রিয়ায় শেয়ার নির্ধারণের সুযোগ বন্ধ করতে যতটা কঠোর হওয়া প্রয়োজন, ততটাই কঠোর হবে বিএসইসি। বিদ্যমান আইনের দুর্বলতা পরিহারের পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাতে কেউ আইনের দুর্বলতাকে ব্যবহার করতে না পারে, সে ব্যবস্থা থাকবে নতুন সংশোধনে। আইনটি পুনরায় সংশোধনের আগে আর কোনো কোম্পানিকে বুক বিল্ডিং প্রক্রিয়ায় মূলধন সংগ্রহের অনুমতি না দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়টি আবারও নিশ্চিত করেছেন কমিশন কর্মকর্তারা।

বিদ্যমান আইনে কোনো কোম্পানিকে আইপিও প্রক্রিয়ায় কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহের শর্ত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে অভিহিত মূল্য ১০ টাকা দরে আইপিওতে আসা কোম্পানিকে কমপক্ষে দেড় কোটি শেয়ার বিক্রি করতে হয়। তবে বুক বিল্ডিং প্রক্রিয়ায় কোনো কোম্পানির প্রিমিয়ামসহ শেয়ারদর (কাট-অব-প্রাইস) বেশি নির্ধারিত হলে, যাতে দেড় কোটির কম শেয়ার ইস্যুর প্রয়োজন হতে পারে, এমন ক্ষেত্রে আইপিওটি বাতিলের বিধান রয়েছে।

কর্মকর্তারা জানান, নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী কমপক্ষে ৩০ কোটি টাকার মূলধন (পরিশোধিত মূলধনের হিসাবে) বা তিন কোটি শেয়ার ইস্যুর বাধ্যবাধকতা আরোপ হলে অতিরিক্ত প্রিমিয়াম নির্ধারণের সুযোগ বন্ধ হবে। বিশেষত যেসব কোম্পানি এরই মধ্যে তাদের মূলধন উত্তোলনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, সেগুলো বেকায়দায় পড়তে পারে। এসব কোম্পানি তাদের মূলধন উত্তোলনের লক্ষ্য পুনর্নির্ধারণ না করে এ প্রক্রিয়ায় এলে কাঙ্ক্ষিত প্রিমিয়াম পাওয়ার সুযোগ থাকবে না।

উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, কোনো কোম্পানি বুক বিল্ডিং প্রক্রিয়ায় প্রিমিয়ামসহ ৫০ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করতে চায়। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ারদর ২৪ টাকা প্রিমিয়ামসহ সর্বোচ্চ ৩৪ টাকা নির্ধারণের সুযোগ আছে। এর বেশি হলে শেয়ার ইস্যু করতে হবে দেড় কোটি টাকার কম। এতে আইপিও বাতিল হবে।

প্রস্তাবিত সংশোধন অনুযায়ী ৩০ কোটি টাকার মূলধন (পরিশোধিত মূলধনের হিসাবে) বা তিন কোটি শেয়ার বিক্রির বাধ্যবাধকতা আরোপ হলে এবং অন্যসব শর্ত অপরিবর্তিত থাকলে কোম্পানিটির শেয়ারদর (কাট-অব-প্রাইস) ৭ টাকা প্রিমিয়ামসহ সর্বোচ্চ ১৭ টাকা হতে পারবে। এর বেশি হলে আইপিও শর্তপূরণে ব্যর্থতার কারণে আইপিওটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হবে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, এরই মধ্যে অনেক কোম্পানি বুক বিল্ডিং প্রক্রিয়ায় মূলধন উত্তোলনের কার্যক্রম শুরু করেছে। তাদের দিক বিবেচনায় আগামী তিন মাসের মধ্যেই আইনটি সংশোধনের চূড়ান্ত খসড়া কমিশন সভায় অনুমোদন ও জনমত যাচাই শেষে চূড়ান্ত অনুমোদনের চেষ্টা চলছে।

এদিকে প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসই বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে যৌক্তিক মূল্য (ফেয়ার প্রাইস) নির্ধারণে তাদের প্রস্তাব দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের প্রস্তাব করা সব দরের মধ্যে ওপরের দিক থেকে দুই-তৃতীয়াংশের বা ৫০টি বা এ দুইয়ের মধ্যে যেটি বেশি হয়, তার ওয়েটেড এভারেজ প্রাইসকেই চূড়ান্ত শেয়ারদর (কাট-অব-প্রাইস) করা যেতে পারে।

অপর শেয়ারবাজার সিএসই অবশ্য নির্দেশক মূল্যসহ দুই ধাপে শেয়ারদর নির্ধারণের বুক বিল্ডিং প্রক্রিয়ার পূর্বের ধারা ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব করেছে। এ ছাড়া ইলেট্রনিক বিডিং প্রক্রিয়ায় প্রস্তাবকৃত শেয়ারদর প্রদর্শন ব্যবস্থা তুলে দেওয়ারও প্রস্তাব করেছে স্টক এক্সচেঞ্জ। কমিশন কর্মকর্তারা আরও জানান, বুক বিল্ডিং প্রক্রিয়ায় শেয়ারদর নির্ধারণের প্রক্রিয়ার (ইলেট্রনিক বিডিং) অল্প কিছুদিন আগে রোড-শো করার বিধান করা হবে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: