০৯ জানুয়ারি ২০১৯ বুধবার, ০১:৩৮ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
কয়েক বছর ধরেই পরিচালন লোকসানের মধ্যে জিকিউ বলপেন। উৎপাদিত পণ্যে ধারাবাহিক লোকসানের কারণে বিকল্প বিনিয়োগে ঝোঁক বাড়ায় কোম্পানিটি। এরই ধারাবাহিকতায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে বড় অংকের বিনিয়োগ করে জিকিউ বলপেন। পরিচালন লোকসান কাটাতে না পেরে এখন শেয়ার ব্যবসার মাধ্যমেই অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে কোম্পানিটি। অবশ্য শেয়ার ব্যবসার মাধমে কয়েক বছর মুনাফায় থাকলেও সর্বশেষ হিসাব বছরে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি ভালো না থাকায় লোকসানে পড়ে জিকিউ বলপেন। কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এ তথ্য মিলেছে।
দেশের বাজারে বলপেন উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৮১ সালে যাত্রা শুরু হয় জিকিউ বলপেনের। প্রায় ৩০ বছর ভালো ব্যবসা করলেও ২০১২ সালের পর থেকে নানামুখী চ্যালেঞ্জে মার্কেট শেয়ার হারাতে শুরু করে কোম্পানিটি। পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১২ সালে কোম্পানিটি পণ্য বিক্রি থেকে আয় করে প্রায় ২১ কোটি টাকা। পরের বছর আয় নেমে যায় ১৬ কোটি টাকায়। ২০১৪ সালে পণ্য বিক্রি থেকে আয় সামান্য বাড়লেও পরের বছর থেকে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে কোম্পানিটি। ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে পণ্য বলপেন বিক্রি নেমে আসে ১০ কোটি ৭৪ লাখ টাকায়। আর সর্বশেষ ২০১৭-১৮ হিসাব বছরে বিক্রি নেমে আসে ৭ কোটি ৯২ লাখ টাকায়। ধারাবাহিকভাবে পণ্য বিক্রি কমে যাওয়ায় কোম্পানিটি পরিচালন লোকসানের মধ্যে পড়ে। এ অবস্থায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত আয়ই হয়ে ওঠে কোম্পানির মুনাফার প্রধান উৎস। এর বাইরে ব্যাংকে রাখা স্থায়ী আমানত থেকে সুদ বাবদ কিছু আয় আসে।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১২ সালে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে ১৬ কোটি ৯ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে জিকিউ বলপেন। পরের বছর এ বিনিয়োগ দাঁড়ায় ১৭ কোটি ৯০ লাখ টাকায়। প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগের প্রায় ৯০ শতাংশই হয় ব্যাংক খাতের শেয়ারে। আর এ খাতের শেয়ারের দর বাড়ায় ২০১৩ সালে তাদের বিনিয়োগ করা সিকিউরিটিজের বাজার মূল্য দাঁড়ায় ২৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকায়। ফলে অনিরূপিত মুনাফা (আনরিয়েলাইজড গেইন) হয় ১৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা। তবে বাজার পরিস্থিতি নেতিবাচক থাকায় ২০১৫ সালে পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনাবেচায় লোকসানে পড়ে যায় কোম্পানিটি। এ সময় কোম্পানির নিট লোকসান হয় এক কোটি টাকা।
২০১৬-১৭ হিসাব বছরে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি ভালো থাকায় জিকিউ বলপেনের বিনিয়োগ করা সিকিউরিটিজের অনিরূপিত মুনাফা বাড়ে ৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা। আর শেয়ার কেনাবেচা থেকে কোম্পানির মুনাফা হয় ৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এর বাইরে ধারণকৃত শেয়ারের বিপরীতে নগদ লভ্যাংশ হিসেবে ১ কোটি ৬২ লাখ টাকা আয় আসে। আর স্থায়ী আমানত থেকে সুদ বাবদ আয় হয় ৪৯ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে এ সময় অপরিচালন আয় হয় ৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে কোম্পানির পণ্য বিক্রি থেকে আয় হয় ১০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আর পণ্য উৎপাদন ও প্রশাসনিক ব্যয়ের পর কোম্পানির পরিচালন লোকসান দাঁড়ায় ৪ কোটি ৬ লাখ টাকায়। তবে পুঁজিবাজার থেকে আসা আয়ের কারণে কোম্পানিটি ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে জিকিউ বলপেনে ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা নিট মুনাফায় থাকে।
তবে ২০১৭-১৮ হিসাব বছর পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নেতিবাচক থাকায় জিকিউ বলপেনও লোকসানে পড়ে যায়। এ সময় পুঁজিবাজার থেকে প্রত্যাশিত মুনাফা না আসায় পরিচালন লোকসান সামাল দিতে পারেনি কোম্পানিটি। এ সময় স্থায়ী আমানত থেকে প্রাপ্ত সুদ, ধারণ করা সিকিউরিটজ থেকে প্রাপ্ত নগদ লভ্যাংশ ও শেয়ার কেনাবেচা থেকে আয় হয় ১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ৭০ শতাংশ কম। আর কোম্পানির পণ্য বিক্রি থেকে আয় আরও কমে যাওয়ায় পরিচালন লোকসান দাঁড়ায় ৫ কোটি ৬২ লাখ টাকায়। ফলে ২০১৭-১৮ হিসাব বছরে কোম্পানির নিট লোকসান দাঁড়ায় ৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকায়।
২০১৭-১৮ হিসাব বছরে পুঁজিবাজারে কোম্পানির বিনিয়োগ করা বিভিন্ন সিকিউরিটিজের বাজারমূল্য দাঁড়ায় ২৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এতে অনিরূপিত মুনাফা কমে ৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা। পুঁজিবাজার থেকে আয় কমে যাওয়ায় ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকেও ৬৪ লাখ টাকার নিট লোকসানে পড়ে জিকিউ বলপেন।
জিকিউ বলপেনের কোম্পানি সচিব উজ্জ্বল কুমার সাহা বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই পণ্য বিক্রি অব্যাহতভাবে কমছে। এতে পরিচালন লোকসানে পড়েছে কোম্পানিটি। তবে এ সময়ে পুঁজিবাজারে বিভিন্ন সিকিউরিটিজ থেকে প্রাপ্ত আয়ই কোম্পানিকে টিকিয়ে রাখছে। ফলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ওপরই কোম্পানিটি মুনাফায় থাকবে কি না, তা নির্ভর করছে। তবে আমাদের মূল ব্যবসা ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এরই মধ্যে আমরা নতুন ধরনের কয়েকটি কলম বাজারে ছেড়েছি, যা থেকে ভালো সাড়া মিলছে। এরফলে আমরা হারানো মার্কেট শেয়ার পুনরুদ্ধার করতে পারব বলে আশা করছি।
২০১৬ সালে কোম্পানিটি ব্যবসা বহুমুখীকরণের উদ্যোগ হিসেবে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রী উৎপাদনের ইউনিট স্থাপন করে। তবে পরের বছর ইউনিটটি অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এর উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এছাড়া জিকিউ গ্রুপের ছয় কোম্পানিতে ৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। যদিও এ বিনিয়োগ থেকেও কোম্পানির তেমন কোনো মুনাফা আসছে না।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।