facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪

Walton

৬৫ বছরে সমাপনী পরীক্ষা


১১ নভেম্বর ২০১৬ শুক্রবার, ০৯:৫৭  পিএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


৬৫ বছরে সমাপনী পরীক্ষা

বয়স ৬৫ বছর। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে দেহ। তবুও লেখাপড়ার অদম্য বাসনা নিয়ে প্রতিদিনই বিদ্যালয়ে ছুটছেন মেহেরপুরের গাংনীর বাসিরন নেছা। বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে মেঠোপথ পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয় তাকে। তারপরও ক্লান্তিবোধ নেই।

বয়স যে লেখাপড়ার জন্য কোনো বাধা নয়, তারই প্রমাণ করছেন মেহেরপুর গাংনী উপজেলার হোগলবাড়িয়া গ্রামের ৬৫ বছরের বাসিরন নেছা। বয়স বাধ সাধাতে পারেনি তাকে। ছোটকাল থেকেই লেখাপড়ার প্রতি ঝোঁক হয় তার। কিন্তু সংসারের কাজ ফেলে সময় করে উঠতে পারেননি। পরে নাতিদের বিদ্যালয়ে পৌঁছে দিতেন। নাতিদের সঙ্গে মাঝে-মধ্যে পড়ালেখাও শিখতেন।

এক পর্যায়ে যোগাযোগ করেন হোগলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে। তাদের পরামর্শে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি। এবার তিনি প্রাথমিক সমাপনী (পিএসসি) পরীক্ষায় অংশ নেবেন। সকাল হলেই বই হাতে প্রতিদিন ছুটে যান বাড়ি থেকে ৭০০ গজ দূরে ১২ বছরের মেয়ে জুলেখার বাড়িতে। সহপাঠীর কাছেই পড়েন তিনি। সেখানে কয়েক ঘণ্টা পড়ালেখা করে ফিরে আসেন বাড়িতে। বাড়ির কাজকর্ম শেষ করে সহপাঠীর সঙ্গেই রওনা দেন বিদ্যালয়ে। সেখানে ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরে আসেন।

অনেকেই তাকে দেখে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করলেও তাতে কর্ণপাত করেননি তিনি। আবার অনেকের উৎসাহে অনুপ্রাণিত হন। পিএসসি পাস করলে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে এসএসসি পাস করার ইচ্ছা আছে বাসিরন নেছার।

বাসিরন নেছার ছেলে আকবর আলী ও মহির উদ্দিন জানান, অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার কারণে স্কুলে যেতে পারেননি মা। কিন্তু লেখাপড়ার প্রবল ইচ্ছা ছিলো তার। এ বয়সে বিদ্যালয়ে গেলে অনেকেই নানা কথা বলে। নিষেধ করলে তাতে কর্ণপাত করেন না। এক পর্যায়ে এসে আর বাধা দেননি।

পরীক্ষার ফিসহ সব ধরনের সহযোগিতা করেন বসিরন নেসার ছেলেরা। এখন মাকে নিয়ে গর্ববোধ করেন তারা।

বাসিরন নেছার সহপাঠী সিয়াম ও আঁখি জানায়, বাসিরনের সঙ্গে আনন্দে ক্লাস করে তারা। লেখাপাড়ায় সহযোগিতা করার পাশপাশি একসঙ্গে খেলাধুলায় মত্ত থাকেন।

বাসিরন নেছার প্রতিবেশী কাকলি ও ববিতা খাতুন জানান, শুধু লেখাপড়ায় নয়। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের খোঁজ-খবর নেন বাসিরন নেছা। এ কারেণ অনেক ঝরে পড়া শিক্ষার্থী বিদালয়মুখী হয়েছে।

মেহেরপুর গাংনী উপজেলার হোগলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দীন জানান, নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে পড়ালেখায়ই গভীর রয়েছে মনোযোগ তার। বিদ্যালয়টি সব সমই প্রাণবন্ত করে রাখেন বাসিরন।

অদম্য ইচ্ছাশক্তির অধিকারী এ নারী বাসিরন নেছা জানান, ছোট বেলা থেকে ইচ্ছা ছিলো পড়ালেখার। কিন্তু অভাব-অনটন আর ছোটবেলায় বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে সংসারের হাল ধরতে হয়। ফলে পড়ালেখার সুযোগ হয়নি। কিন্তু তখন থেকেই ঠিক করেছিলেন সুযোগ পেলেই লেখাপড়া করবো।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: