facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪

Walton

শেয়ারবাজারে বড় বিনিয়োগকারী নেই


০৮ অক্টোবর ২০১৯ মঙ্গলবার, ০১:০১  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


শেয়ারবাজারে বড় বিনিয়োগকারী নেই

তালিকাভুক্ত ১৫ খাতের কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ মৌসুম শুরু হলেও শেয়ার দরে কোনো প্রভাব নেই। উল্টো অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারই দর হারাচ্ছে। সর্বশেষ তিন মাসে প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে এমন ৮৩ শতাংশ শেয়ারের দরপতন হয়েছে। অন্যদিকে ডিসেম্বরে হিসাব বছর শেষ হওয়া ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বীমার ৭৯ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দরপতন হয়েছে।

বাজার-সংশ্নিষ্টরা জানান, মুদ্রাবাজারের তারল্য সংকটের কারণে শেয়ারবাজারে বড় বিনিয়োগকারী নেই। উল্টো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নগদ অর্থের সংকুলানের জন্য শেয়ার বিক্রি করছেন। তাছাড়া নীতিনির্ধারণী ইস্যুতে দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদক্ষেপ বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে না।

দেশের অন্যতম প্রধান মার্চেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, আর্থিক সংকটের কারণে দেশীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমছে। বেশি কমছে বিদেশি বিনিয়োগ। তিনি বলেন, গ্রামীণফোনের কাছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে বড় অঙ্কের কর দাবির বিষয়টি বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভালোভাবে নেননি। এ ঘটনা বাংলাদেশের নীতিনির্ধারণী ইস্যুতে তারা দুর্বলতা হিসেবে দেখছেন, যা পুরো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানান, বড় বিনিয়োগকারীদের নিষ্ফ্ক্রিয়তা বা কারও কারও বিক্রির চাপ পরিস্থিতি নাজুক করে তুলেছে। ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা বড় বিনিয়োগকারীদের দেখে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেন বিধায় সার্বিক বিনিয়োগ কমেছে। এ কারণে লেনদেনের পরিমাণও কমছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শেয়ারদরে।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩১৯ কোম্পানির মধ্যে ২১৮টির হিসাব বছর শেষ হয় জুনে। এরই মধ্যে ১৭ কোম্পানি তাদের লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এই ১৭ কোম্পানির মধ্যে শুধু একটি (সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ) শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

যেসব কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করছে তার মধ্যে ১৩০ শতাংশ নগদসহ সর্বাধিক ১৪০ শতাংশ দেবে ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন। এ ছাড়া এপেক্স ফুটওয়্যার ৫৫ শতাংশ, সামিট পাওয়ার ও এপেক্স ট্যানারি ৩৫ শতাংশ হারে, ইবনে সিনা ও জেএমআই সিরিঞ্জেস ৩০ শতাংশ হারে, বিএসআরএম লিমিটেড ও বিএসআরএম স্টিল ২৫ শতাংশ হারে এবং ইস্টার্ন হাউজিং ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।

এর বাইরে ন্যাশনাল পলিমার ২২ শতাংশ বোনাস, আর্গন ডেনিম ১০ শতাংশ নগদসহ ১৫ শতাংশ, ইভিন্স টেক্সটাইল ২ শতাংশ নগদসহ ১২ শতাংশ, কেপিএস এক্সেসরিজ ১০ শতাংশ নগদসহ ১৫ শতাংশ, দি পেনিনসুলা চিটাগং সাড়ে ৭ শতাংশ নগদ, রানার অটোমোবাইলস ১০ শতাংশ নগদসহ ১৫ শতাংশ, ডরিন পাওয়ার ১৭ শতাংশ নগদসহ (উদ্যোক্তা-পরিচালক বাদে) ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।

গত ছয় মাসে এসব কোম্পানির শেয়ারদর পর্যালোচনায় দেখা গেছে, কেবল সামিট পাওয়ার ছাড়া বাকি সবগুলোর দরপতন চলছে। অবশ্য এর মধ্যে লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেটের পর কিছু কোম্পানির শেয়ারের দর সংশোধনও হয়েছে। `নো ডিভিডেন্ড` ঘোষণা করা সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের দরপতন হয়েছে সবচেয়ে বেশি। গত পাঁচ মাসে কোম্পানিটি শেয়ারদর ৪২ শতাংশ হারিয়ে ৩৮ টাকা থেকে ২২ টাকায় নেমেছে।

উল্লেখযোগ্য লভ্যাংশ ঘোষণার পরও গত দুই থেকে তিন মাসে ইউনাইটেড পাওয়ার, কেডিএস এক্সেসরিজ, রানার অটোমোবাইলস, ন্যাশনাল পলিমারের দরপতন হয়েছে ৩৩ থেকে ৩৭ শতাংশ। এর মধ্যে ইউনাইটেড পাওয়ারের শেয়ারদর এবং গত তিন সপ্তাহের পতনে ৪১০ টাকা থেকে ২৭০ টাকায় নেমেছে। নগদ লভ্যাংশ ঘোষণার পরও ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত দর হারিয়েছে জেএমআই সিরিঞ্জেস, এপেক্স ট্যানারি ও দি পেনিনসুলার।

বাজার-সংশ্নিষ্টরা জানান, লভ্যাংশ ঘোষণা করা কয়েকটি কোম্পানির মুনাফা ও লভ্যাংশ প্রদানের হার বেড়েছে। তারপরও কোম্পানিগুলোর দরপতন হচ্ছে। এর আগের দরপতনে শেয়ারগুলোর দর অপেক্ষাকৃত কমে আসায় বাজারের দরের বিপরীতে লভ্যাংশ আয় (ডিভিডেন্ড ইল্ড) বেড়েছে। তারপরও শেয়ারগুলোতে বিনিয়োগে খুব বেশি আগ্রহ নেই বিনিয়োগকারীদের।

সার্বিকভাবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে মানুষের আস্থার সংকটও বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন স্টক এক্সচেঞ্জের নীতিনির্ধারকরা। তারা বলেন, সুশাসনের ঘাটতিসহ ভালো শেয়ারের জোগান বিনিয়োগকারীদের এ বাজারের প্রতি বিরূপ মনোভাব তৈরি করছে। এ কারণে লভ্যাংশ মৌসুমেও শেয়ার দর হারাচ্ছে। নানা প্রণোদনা ঘোষণাও বিনিয়োগকারীদের বাজারমুখী করতে পারছে না। বিষয়টি অনুধাবন করতে না পারলে সংকট আরও বাড়বে- এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: