facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪

Walton

যেসব কারণে অব্যাহত দরপতন


০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার, ০১:২৫  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


যেসব কারণে অব্যাহত দরপতন

এক মাস বিরতির পর আবারও পতনের ধারায় নেমে এসেছে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি। আর্থিক খাতের তারল্য সংকট ও বিদেশিদের অব্যাহত শেয়ার বিক্রির প্রবণতায় গত ২২ আগস্ট থেকে পুঁজিবাজারে আবারও দরপতন চলছে। শেয়ার দরের অব্যাহত পতনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক নেমে এসেছে পাঁচ হাজার পয়েন্টের নিচে। এ নিয়ে চলতি বছর দ্বিতীয়বার সূচকটি পাঁচ হাজার পয়েন্টের নিচে নামল।

চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারির পর থেকে টানা দরপতনে গত ২২ জুলাই ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স নেমে আসে ৪৯৬৬ পয়েন্টে, যা আড়াই বছরে সূচকের সর্বনিম্ন অবস্থান। এ সময় সূচকটি সাড়ে ১৬ শতাংশ পয়েন্ট হারায়। এরপর গত ২২ জুলাই থেকে পরবর্তী এক মাস সূচকটিতে কিছু বাড়তি পয়েন্ট যোগ হলেও গত ২৫ আগস্ট থেকে আবারও পতন ধারায় পড়ে পুঁজিবাজার। নয় কার্যদিবসের মধ্যে আট দিনই সূচক কমতে দেখা যায়। এ সময় সূচকটি ২৫০ পয়েন্ট কমে গতকাল ৪৯৮৬ পয়েন্টে নেমে আসে।

গতকাল ডিএসইতে বড় মূলধনী কোম্পানির শেয়ারের দরহ্রাসে প্রধান মূল্যসূচক ২০ পয়েন্ট কমে ৪৯৮৬ পয়েন্টে নেমে এসেছে। একই সঙ্গে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ কমে ৩৭৫ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।

বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতনে প্রধান ভূমিকা রাখছে বড় মূলধনী বিশেষ করে গ্রামীণফোনের শেয়ারের দরহ্রাস। সরকারের বিপুল পরিমাণ বকেয়া আদায়কে কেন্দ্র করে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির সঙ্গে টানাপড়েনের কারণে গত ১ এপ্রিল থেকে গ্রামীণফোনের শেয়ারের দর কমেছে ৩০ দশমিক ৫ শতাংশ বা ১২৮ টাকা। এককভাবে এ কোম্পানির কারণে ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ৭৮ পয়েন্ট। এর বাইরে ব্যাংক, সিমেন্ট, এনবিএফআই, বস্ত্র, প্রকৌশল, সেবা ও নির্মাণ খাতের শেয়ারের বড় পতন সূচক কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

২০১৮ সালের পর চলতি বছরও প্রায় ২০ শতাংশ দর হারিয়েছে সিমেন্ট খাত। পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের অবসায়নের কারণে এনবিএফআই খাত ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ দর হারিয়েছে। এ সময় বস্ত্র খাত হারিয়েছে ১৬ শতাংশ বাজার মূলধন। এর বাইরে সূচকে প্রভাব বিস্তারকারী ব্যাংক খাত সাড়ে ৪ শতাংশ, প্রকৌশল ৮ দশমিক ৮ শতাংশ, সেবা ও নির্মাণ খাত ৮ দশমিক ৮ শতাংশ, ট্যানারি খাত ১২ দশমিক ৭ শতাংশ ও পাট খাত ১২ দশমিক ৮ শতাংশ দর হারিয়েছে।

পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে চলতি বাজেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানির নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। সঙ্গে বোনাস লভ্যাংশের সুযোগও রাখা হয়। তবে বোনাস লভ্যাংশ দিতে হলে তা নগদের সমপরিমাণ দিতে হবে। কোনো কোম্পানি নগদের চেয়ে বোনাস লভ্যাংশ বেশি দেয় তাহলে উক্ত বোনাস ইস্যুর ওপর ১০ শতাংশ কর দিতে হবে। এছাড়া তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে নিট লাভের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ হিসেবে দেওয়ার শর্তও দেওয়া হয়। এছাড়া বিনিয়োগকারীর করমুক্ত লভ্যাংশ আয়ের সীমা ২৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজারে উন্নীত করা হয় বাজেটে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের পুনঃঅর্থায়ন তহবিলে সাড়ে ৮০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়। তবে এসব প্রণোদনার কোনো প্রভাবই পড়েনি বাজারে।

আর্থিক খাতে তারল্য সংকটের জেরে ২০১৮ সালে অধিকাংশ শেয়ারের দরহ্রাসের কারণে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচকটি প্রায় ১৪ শতাংশ পয়েন্ট হারায়। চলতি বছরও ৮০ শতাংশের বেশি শেয়ারের দরহ্রাসের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগে লোকসানে রয়েছেন। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ও তারল্য সংকটের কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের নতুন করে বিনিয়োগ সক্ষমতাও নেই। চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে গত ছয় মাস ধরেই বিদেশিরা শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবির সক্ষমতাও কমে গেছে। ব্যক্তিশ্রেণির বড় বিনিয়োগকারীরাও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে বিক্রিচাপ সামাল দিতে নতুন তহবিলের জোগান না পেলে বাজার পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: