০৩ জানুয়ারি ২০১৭ মঙ্গলবার, ০৫:১১ পিএম
শেয়ার বিজনেস24.কম
ব্রিটেনের রাজপরিবার নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই খোদ ব্রিটিশদের মধ্যেই। সারা পৃথিবীর মানুষেরও আগ্রহের কমতি নেই এই রাজকীয় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। এখনো ১৬টি দেশে সাংবিধানিক রানীর মর্যাদা পান বর্তমানে রাজসিংহাসনে থাকা দ্বিতীয় এলিজাবেথ। আর তাই তার সম্পদের পরিমাণ মানুষ আগ্রহভরে জানতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক।
২০১৫ সালে ব্রিটিশ গণমাধ্যম সানডে টাইমস রানীর সম্পত্তি নিয়ে তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন। এতে বলা হয়, রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ ৩৪ কোটি পাউন্ড বা ৪৯ মিলিয়ন ডলার। তার প্রকাশ্য আয়ের মূল উৎস ‘সোভারেইন গ্রান্ট’। ক্রাউন এস্টেট থেকে প্রতিবছর আয়কৃত অর্থের একটি নির্দিষ্ট অংশ হচ্ছে এই সোভারেইন গ্রান্ট। ক্রাউন এস্টেটের বেশির ভাগ সম্পত্তিই রয়েছে লন্ডনে। এর বাইরে স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও নর্দান আয়ারল্যান্ডেও সম্পদ রয়েছে।
১৭৬০ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় জর্জ দেশটির সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। চুক্তি অনুসারে, রাজকীয় জমিজমা থেকে উপার্জিত আয় সরকারি কোষাগারে জমা হবে। সরকারের কোনো খরচ রাজাকে আর বহন করতে হবে না। বিনিময়ে তিনি পাবেন বার্ষিক একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ। বর্তমানে সোভারেইন গ্রান্ট হচ্ছে ব্রিটেনের অন্যতম বৃহৎ স্বতন্ত্র একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে এর মূলধনের পরিমাণ ইতিহাসের সর্বোচ্চ, ১ হাজার ১৫০ কোটি পাউন্ড।
প্রতিবছর ব্রিটিশ রাজপরিবারের কোষাগারে যে পরিমাণ অর্থ আয় হয়, রাজপরিবারের অভিভাবক হিসেবে তার ১৫ ভাগ রানী এলিজাবেথের কোষাগারে জমা হয়। কারণ তিনিই রাজপরিবারের অভিভাবক। এই অর্থই হচ্ছে ‘সোভারেইন গ্র্যান্ট’ বলা হয়।
গত বছর সোভারেইন গ্র্যান্ট থেকে রানীর ব্যক্তিগত কোষাগারে জমা পড়েছে ৩ কোটি ৭৯ লাখ পাউন্ড। বছর শেষে দেখা গেছে, রানী এলিজাবেথ ৩ কোটি ৫৭ লাখ পাউন্ড বিভিন্ন উৎসে ব্যয় করেছেন। এরমধ্যে তার বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা পরিশোধ, সম্পত্তি দেখাশোনা, বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ এবং আনুষঙ্গিক খাতে রানী এসব অর্থ খরচ করেছেন।
রানীর ব্যক্তিগত আয়েরও উৎস রয়েছে, যাকে বলা হয় ‘প্রিভি পার্স’। এই আয়ও আসে রাজপরিবারের বিভিন্ন ভূ-সম্পত্তি থেকে। তবে তা ক্রাউন এস্টেট থেকে আলাদা। ব্রিটেন এবং ওয়েলসে আছে এসব সম্পদ। প্রিভি পার্সে রানীর ভূমি আছে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার একর। এগুলো থেকে রানীর ব্যক্তিগত আয় হয় ১ কোটি ৩৩ লাখ পাউন্ড।
সানডে টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, বিভিন্ন ব্রিটিশ কোম্পানিতে রানীর বিনিয়োগ রয়েছে ১১ কোটি পাউন্ড। সেখান থেকেও আয়ের একটি অংশ এলিজাবেথের ব্যক্তিগত কোষাগারে জমা হয়। এর বাইরে রাজপরিবারের বিভিন্ন স্ট্যাম্প, চিত্রকলা, মণি-মুক্তা এবং গাড়ি-ঘোড়া থেকেও অর্জিত অর্থের কিছু অংশ রানীর কোষাগারে জমা হয়।
তবে ব্রিটিশ রানীর প্রদর্শিত সম্পদের পাশাপাশি রয়েছে বিপুল অপ্রদর্শিত সম্পদও। যেমন ইংল্যান্ডের পর্যটন খাত থেকে প্রাপ্ত অর্থ। প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুল সংখ্যক পর্যটক শুধু ইংল্যান্ডের বাকিংহ্যাম প্যালেস দেখতে যান যুক্তরাজ্যে। রাজপ্রাসাদের পাশাপাশি ব্রিটিশ জাদুঘরগুলোর আয়ও রানীর কোষাগারে জমা হয়। এসব জাদুঘর আয়করের আওতামুক্ত থাকায় এগুলো থেকে ব্রিটিশ রানীর প্রাপ্ত আয় সম্পর্কে জানা যায় না।
প্রসঙ্গত, বর্তমান রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ইংল্যান্ডের সিংহাসনে বসেন ১৯৫২ সালে। এরপর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের ধনকুবেররা ব্যবসা করতে যেতে থাকেন ব্রিটেনে। রাজপরিবারের হাত ধরেই রাতারাতি সম্পদশালী ব্যক্তিতে পরিণত হন অনেকে। দ্বিতীয় এলিজাবেথের আগে নানা বিধি নিষেধের মধ্যে বিনিয়োগ করতে হতো। বর্তমান রানী সিংহাসনে বসার পর সেসব বিধি নিষেধ শিথিল করেন। অনেক আইন বাতিল করেন।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।